এইচএমপিভি (HPV)

এইচএমপিভি কী (HPV) বা হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস ? এই ভাইরাসের উপসর্গগুলো কী?

Health-স্বাস্থ্য ব্লগ ওয়েব

এইচএমপিভি (HPV) বা হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস হলো একটি ভাইরাসের গোষ্ঠী, যা প্রধানত ত্বক এবং মিউকাস মেমব্রেনের মধ্যে সংক্রমণ সৃষ্টি করে। এটি একাধিক ধরনের ভাইরাসের সমন্বয়ে গঠিত, যেগুলো ত্বক, যোনি, গলা, মুখ, আঙুলের নখ, ইত্যাদিতে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

এইচএমপিভি সংক্রমণ সাধারণত যৌনমাধ্যমে হতে পারে, তবে এটি ত্বকের সাথে ত্বক লাগলেই ছড়াতে পারে। কিছু প্রকারের এই ভাইরাস ত্বকের কন্ডিলোমা (warts) সৃষ্টি করে, তবে কিছু ভাইরাস ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে, যেমন:

  • গর্ভাশয়ের ক্যান্সার
  • মুখগহ্বরের ক্যান্সার
  • গলা, গলার মাংশপেশি, এবং অন্য কিছু শ্বাসতন্ত্রের ক্যান্সার।

এইচএমপিভি ভাইরাসের উপসর্গ:

এইচএমপিভির বেশিরভাগ প্রকারই কোনো লক্ষণ সৃষ্টি করে না এবং এটি শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে নিজে থেকেই চলে যেতে পারে। তবে, কিছু প্রকারের সংক্রমণ দীর্ঘমেয়াদী হলে পরবর্তী সময়ে কন্ডিলোমা (warts) বা ক্যান্সার সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।

  1. কন্ডিলোমা (Warts):
    • যৌন অঙ্গের চারপাশে ছোট টিউমার বা ফোলাভাব সৃষ্টি হতে পারে, যাকে সাধারণভাবে কন্ডিলোমা বা জেনিটাল ওয়ার্ট বলা হয়।
  2. গর্ভাশয়ের ক্যান্সার:
    • গর্ভাশয়ের উচ্চ ঝুঁকির HPV (বিশেষ করে HPV 16 ও 18) গর্ভাশয়ের ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে, যদিও প্রাথমিক পর্যায়ে কোনো লক্ষণ থাকে না। নিয়মিত প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষার মাধ্যমে এই ক্যান্সার শনাক্ত করা যায়।
  3. মুখগহ্বর, গলা ও অন্যান্য ক্যান্সার:
    • এইচএমপিভি সংক্রমণ গলার ক্যান্সার, মুখগহ্বরের ক্যান্সার বা অরোফ্যারিঞ্জিয়াল ক্যান্সারেরও কারণ হতে পারে, যা খুব কম ক্ষেত্রেই লক্ষণ দেয়।
  4. অন্যান্য উপসর্গ:
    • ত্বকের সাধারণ ওয়ার্ট (যেমন আঙুলে বা হাতের পিঠে) কিছু প্রকারের HPV দ্বারা হতে পারে।

অথবা, অনেক সময় HPV ভাইরাসের উপস্থিতি থাকে, কিন্তু কোনো উপসর্গও প্রকাশ পায় না এবং এটি শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা দ্বারা দূর হয়ে যায়।

এইচএমপিভির কিছু প্রকারের জন্য টিকা রয়েছে, যা সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে সহায়ক হতে পারে, বিশেষ করে গর্ভাশয়ের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে।

এইচএমপিভি (HPV) সম্পর্কিত আরও বিস্তারিত:

এইচএমপিভি (HPV) বা হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস একটি বড় ভাইরাসের গোষ্ঠী, যা ২০০টিরও বেশি ভ্যারিয়েন্ট বা প্রকারে বিভক্ত। এটি মানুষের ত্বক, যোনি, গলা, গলার মাংসপেশি, এবং অন্যান্য মিউকাস মেমব্রেনের উপর সংক্রমণ ঘটাতে পারে। HPV সংক্রমণ সাধারণত কোনো লক্ষণ ছাড়াই চলে যেতে পারে, কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী সংক্রমণ ক্যান্সার বা অন্যান্য গুরুতর রোগ সৃষ্টি করতে পারে।

HPV ভাইরাসের প্রকার:

এইচএমপিভি সাধারণত ২টি প্রধান গ্রুপে ভাগ করা হয়:

  1. লো-রিস্ক (Low-risk) HPV: এই প্রকারের ভাইরাস সাধারণত কন্ডিলোমা বা জেনিটাল ওয়ার্ট সৃষ্টি করে, তবে ক্যান্সার সৃষ্টি করার সম্ভাবনা থাকে না।
  2. হাই-রিস্ক (High-risk) HPV: এই প্রকারের ভাইরাস দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণের কারণে ক্যান্সারের সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে গর্ভাশয়, গলা, মুখগহ্বর, এবং মিউকাস মেমব্রেনের ক্যান্সার।

এইচএমপিভি সংক্রমণের উপসর্গ:

এইচএমপিভি সংক্রমণের উপসর্গ বিভিন্ন হতে পারে এবং এর মধ্যে কিছু সাধারণ লক্ষণ:

  1. জেনিটাল ওয়ার্ট (Genital Warts):
    • লক্ষণ: এটি সাধারণত গোপনাঙ্গ বা যৌন অঙ্গের চারপাশে ছোট, কোমল বা ফুলে ওঠা, সাদা বা গোলাপী রঙের ওয়ার্ট হিসেবে দেখা যায়।
    • স্থান: গোপনাঙ্গ, মুত্রনালী, আঙুল, এবং মুখগহ্বরে।
    • এই ধরনের কন্ডিলোমা HPV 6 এবং 11 ধরনের কারণে হয়, যা কম ঝুঁকিপূর্ণ।
  2. গর্ভাশয়ের ক্যান্সার (Cervical Cancer):
    • লক্ষণ: প্রাথমিকভাবে কোনো লক্ষণ না থাকলেও, দীর্ঘমেয়াদী উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ HPV (বিশেষত HPV 16 ও 18) সংক্রমণ গর্ভাশয়ের ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে।
    • সাধারণ লক্ষণ: অনিয়মিত রক্তস্রাব, যৌন মিলনের সময় যন্ত্রণা, পেটের নিচের অংশে ব্যথা ইত্যাদি।
    • প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষা (Pap smear) এবং হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস ডিএনএ টেস্ট দ্বারা গর্ভাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি নির্ণয় করা সম্ভব।
  3. মুখগহ্বরে ও গলার ক্যান্সার (Oral and Throat Cancer):
    • লক্ষণ: গলার ব্যথা, খাবার গিলতে সমস্যা, কাশি, মুখে ঘা, এবং কণ্ঠস্বর পরিবর্তন হতে পারে।
    • এটি বিশেষত HPV 16 ও 18 কারণে হতে পারে, যা গলার বা অরোফ্যারিঞ্জিয়াল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
  4. অন্যান্য ত্বকের ওয়ার্ট (Skin Warts):
    • এইচএমপিভির কিছু প্রকার ত্বকের সাধারণ ওয়ার্ট তৈরি করতে পারে, যা আঙুলের নখ বা অন্যান্য অংশে হতে পারে।
  5. প্ল্যান্টার ওয়ার্ট (Plantar Warts):
    • পায়ের তলায় বা পায়ের আঙ্গুলের তলায় ছোট, শক্ত, দানাদার ওয়ার্ট তৈরি হয়। এটি সাধারণত HPV 1 এবং 4 দ্বারা হয়।

HPV সংক্রমণের ঝুঁকি এবং আক্রান্ত হওয়ার কারণ:

  1. যৌন সম্পর্ক: HPV প্রধানত যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়, তবে এটা ত্বক থেকে ত্বকে সংক্রমণও ঘটাতে পারে।
  2. যৌন সঙ্গী সংখ্যা: একাধিক যৌন সঙ্গী থাকা HPV সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
  3. কম বয়সে যৌন কার্যকলাপ শুরু করা: কম বয়সে যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে HPV সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
  4. কম প্রতিরোধ ক্ষমতা: যদি একজন ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেম দুর্বল থাকে, তবে HPV সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
  5. ধূমপান: ধূমপান HPV সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় এবং গর্ভাশয়ের ক্যান্সার বা গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

HPV থেকে প্রতিরোধ:

  1. টিকা (Vaccine):
    • HPV ভাইরাসের কিছু প্রকারের বিরুদ্ধে টিকা রয়েছে, যা গর্ভাশয়ের ক্যান্সার, অরোফ্যারিঞ্জিয়াল ক্যান্সার এবং অন্যান্য যৌন সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সহায়ক। বর্তমানে গার্ডাসিল এবং গার্ডাসিল 9 হল জনপ্রিয় HPV টিকা, যা ১১-২৬ বছর বয়সী ব্যক্তিদের জন্য সুপারিশ করা হয়।
  2. নিয়মিত স্ক্রীনিং (Screening):
    • মহিলাদের জন্য গর্ভাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষা ও HPV ডিএনএ টেস্ট করা উচিত। প্যাপ স্মিয়ার পরীক্ষা গর্ভাশয়ের অস্বাভাবিক পরিবর্তনগুলি আগে থেকে শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
  3. যৌন সুরক্ষা (Condoms):
    • কনডম ব্যবহার HPV সহ অন্যান্য যৌনসংক্রান্ত সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে, তবে এটি ১০০% সুরক্ষা দিতে পারে না কারণ HPV ত্বকের সংস্পর্শে থেকেও ছড়াতে পারে।

সারাংশ:

এইচএমপিভি (HPV) একটি সাধারণ ভাইরাস যা ত্বক এবং মিউকাস মেমব্রেনকে আক্রান্ত করে। এটি বেশিরভাগ সময় কোনো লক্ষণ সৃষ্টি না করলেও, কিছু উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ প্রকার দীর্ঘমেয়াদী সংক্রমণের মাধ্যমে ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। HPV সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য টিকা, স্ক্রীনিং, এবং যৌন সুরক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *