জীবনে সফল হওয়ার জন্য এখন থেকেই চেষ্টা করে যান ।
জীবনের গল্প:
আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু।
নিজের বলার মত একটা গল্প নিজেকে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছে, সুন্দর সুসজ্জিত এক নতুন পৃথিবীর। যারা কখনো কোনদিনও কল্পনাও করেনি কিন্তু আজ তারা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখে, শুধু স্বপ্ন দেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় নিজের বলার মত একটা গল্প, সেশন চর্চা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে এক এক জন সফল উদ্দোক্তা হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করুন ।
আমাদের অধরা স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য সর্বদা চেষ্টা করবো, ইনশাআল্লাহ। আমার প্রিয় ভাই বোনদের সামনে তুলে ধরছি বাস্তব গল্প , আমার এজন পরিচিত লোকের জীবন কাহিনী উনি বলেন…
🌷 আমার বাস্তব জীবনের গল্প। জীবনের গল্পের শুরু আছে, কিন্তু শেষ নেই। প্রতিদিনই মানুষের জীবনে নতুন নতুন গল্পের লাইন যুক্ত হয়। আজ আমার এই ছোট্ট জীবনে ঘটে যাওয়া কিছু কথা আপনাদের সবার সাথে শেয়ার করব। আপনারা সকলেই জানেন হয়তো, যার জীবনে যত বেশি চাহিদা তার তত বেশি কষ্ট, কষ্টটা তখনই হয় যখন সাধ্যের চেয়ে চাহিদা বেশি থাকে। তাই এমন কিছু চাহিদা না থাকাই ভালো যেটা পূরণ করার মত সামর্থ্য তার পরিবারের নাই।
চাহিদা পূরণ না হলে প্রতিটা মানুষের মনের ভিতর এই কষ্ট লাগে কষ্ট লাগাটা স্বাভাবিক। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের কোন না কোন গল্প থাকে। সেটা হতে পারে কষ্টের ,হতে পারে ব্যর্থতার, হতে পারে সুখের, হতে পারে সফলতার।
প্রতিটা গল্পের মধ্যে থাকে দুঃখ কষ্ট, হাসি কান্না, ব্যথা বেদনা, পাওয়া না পাওয়া ইত্যাদি বিষয়গুলো। ঠিক এমন কিছু বিষয় আমার জীবনে আছে। পাঁচটা মানুষের মত আমারও চাহিদা আছে কিন্তু আমি সবসময় চেষ্টা করি আমার চাহিদাগুলো আমার সাধ্যের ভিতরে রাখতে। যাতে কষ্ট হলেও কষ্ট না পাই,
শৈশবকাল
আমি ছোট বেলা থেকে আমার নানা বাড়িতে থাকি। সেখানে ছিল আমার নানা নানু আমার 2 মামা। কিন্তু আমার শৈশব কালটা ছিল অন্যরকম যদিও আনন্দময় ছিল আবার বিষাদে ভরা ছিল। অন্দমন থাকার কারণ আমার নানা নানু আমার মামারা আমাকে অনেক আদর করতো ভালোবাসতো যখন যা আবদার করতাম তখনই আমাকে তা দেওয়া হতো।
আমার এমন কোন ঘটনা জানা নেই যে আমি একটি জিনিস চাইছি কিন্তু তার আমাকে দিতে পারে নাই শত কষ্ট হলেও তারা আমাকে আমার চাওয়াটা পূর্ণ করেছে। কিন্তু আমার কোন আন্টি ছিল না এবং আশেপাশে আমার কোন বান্ধবী বা খেলার সাথী ছিল না তাই আমি সব সময় একটু বিষণ্নতা অনুভব করতাম। কারণ ছোটবেলায় সবাই বিভিন্ন খেলাধুলায় মেতে থাকে কিন্তু আমি তা করতে পারিনি আমি সব সময় একা একাই থাকতাম তাই মানুষের সাথে ভালো ভাবে মিশতে পারতাম না।
আস্তে আস্তে আমি বড় হই তখন আরো বেশি একা হয়ে যাই। তখন আমার বড় মামা মাদ্রাসার জব করতো সেখানে চলে যায় আমার ছোট মামা বিদেশ চলে যায় আর আমার নানা মিথ্যা মামলার আসামি হয়ে জেলখানায় চলে যায়। বিষয়টা ছিল আমার জীবনের প্রথম সবচাইতে বড় কষ্টের বিষয়। কারন আমার নানা আমাকে কখনো আমার বাবার বাড়িতে গিয়ে ও একটি রাত্র থাকতে দিত না।
সে যেখান থেকে আসতো এসেই আমাকে ডাক তো। কিন্তু যখন জেলখানাতে চলে যায় তখন তো আর চাইলেও দেখতে পেত না তার অনেক কষ্ট হইত তখন প্রতি সপ্তাহে আমার নানু আমাকে নিয়ে জেলখানায় যাইত নানা কে দেখার জন্য। তখন আমার নানা আমাকে দেখে কান্না করে দিত। কিন্তু সেসময়টা বেশি লম্বা হয় নি কারণ একমাস পরেই আমার নানার জাবিন হয়ে যায়।
শিক্ষাজীবন:
২০১৪ আমি এসএসসি পরীক্ষা দেই। সেখানে আমার জীবনের আরেকটি কষ্টের কাহিনী যুক্ত হয়। পড়াশোনায় মোটামুটি অনেক ভালো ছিলাম। আমাদের আত্মীয় স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী বিশেষ করে স্যারেরা ও অনেক বেশি ভালো জানত ভালোবাসতো। তখন আমার অনেক গুলো বান্ধবী ছিল আমরা একসাথে যাওয়া আশা করতাম। কিছুদিন পরে আমাদের রেজাল্ট বের হয় তখন আমার সাথের অনেকেই পাস করে কিন্তু আমি গণিতে ফেল করি।
বিষয়টা ছিল অনেক কষ্টের, সেদিন আমি রুমে দরজা বন্ধ করে অনেক কান্না করছিলাম। মনে হয়েছিল আর কারো সামনে এই মুখ নিয়ে যেতে পারবো না এত শরম লাগছিল। সবাইআমাকে দরজা খোলার জন্য বলছিল তখন আমারও খারাপ লাগছিলো মনে হয়েছিল আত্মহত্যা করি। তখন আমি অনেক বড় একটিভুল করে ফেলি আত্মহত্যার কথা ভুলে আমি ডিসিশন নিলাম এটা করা যাবে না এটা মহাপাপ।আমি একটি ছেলের সাথে রিলেশন করতাম তো ওর সাথে পালিয়ে বিয়ে করে ফেলি।
তখন সে চাকরি করে না সবেমাত্র ডিপ্লোমা কমপ্লিট করেছে। কিন্তু সে ছিল অনেক ভালো আমাকে বলল আত্মহত্যা করতে হবে না আমি বিয়ে করবো যেভাবেই হোক তুমি বেঁচে থাকো সেটা আমি চাই। তখন বিয়ে করে ফেলি ওর পকেটে ছিল ৫০০ টাকা বিয়ে করতে খরচ হয়েছিল ২৫০০০ টাকা। তো অনেক কষ্টে সে একটা কোম্পানিতে চাকরি নিয়ে নেয়।
২০১৬ সালে আমি আবার এসএসসি পরীক্ষা দেই তখন আমার হাজব্যান্ড আমাকে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য নিয়ে আসে। সেখানে আমি পালিয়ে রেজিস্ট্রেশন করে যাই পরীক্ষা দিয়ে যাই। পালিয়ে আসার কারণ কেউ আমাকে মেনে নেয়নি নিতে চাচ্ছে না তখন । এখন আমার বিয়ের ছয় বছর চলে আমার একটি চার মাসের মেয়ে আছে এখনো আমার পরিবারের সাথে আমার যোগাযোগ নেই। কিন্তু আমি যখন পরীক্ষা দিলাম তখন আমি পাশ করলাম।
তারপর আমি ইন্টারে ভর্তি হলাম তখন আমার হাজবেন্ডের কষ্ট হতো অনেক। অল্প টাকা বেতন সেখানে সে বিএসসি পড়ার জন্য ভর্তি হয়েছিল তার অনেক টাকার প্রয়োজন আবার আমার পড়াশোনা করতে টাকার প্রয়োজন তার বাবা নেই তার মায়ের দায়িত্ব আসে তার কাঁধে। তখন তার পড়াশোনা বন্ধ করে দেয় আমার জন্য কিন্তু আমি আবার এইচএসসিতে ফেল করে বসি ইংরেজিতে।
যেদিন রেজাল্ট দেয় সেদিন অনেকে কল দেয় আশে পাশে যারা ছিল তারা জিজ্ঞাসা করে কি করেছি বলতে পারতেছিলাম না কিন্তু সত্য কখনো চাপা থাকেনা বাধ্য হয়ে বলতে হয়েছিল ফেল করেছি। আবার 19 সালে পরীক্ষা দেই তখন পাশ করি।
আমার বিবাহিত জীবন:
আমার শ্বশুরবাড়ির কেউ আজও আমাকে মেনে নিতে পারেনি। যেমন আমার বাবার বাড়িতে ও মেনে নেয়নি। তারপরও আল্লাহর কাছে লক্ষ কোটি শুকরিয়া জানাই তিনি আমাকে ভালোই রেখেছেন সুখে রেখেছেন। মেয়েদের সবচাইতে সুখ হচ্ছে যদি তার হাজবেন্ড ভালো হয়।
হাজবেন্ড অনেক ভালো সব সময় চেষ্টা করে আমাকে ভালো রাখার জন্য তাই আমি নিজেকে অনেক বেশি সুখী মানুষ মনে করি। যেসব মানুষেরা আমার কাছ থেকে দূরে থাকতে চাই আমার হাজব্যান্ড আমাকে তাদের সামনে কখনোই প্রেজেন্ট করেনা করতে চায়না।
অনিক একটা মহৎ মানুষ যদিও মহৎ মানুষের কোনো ব্যাখ্যা হয় না কারণ তাদের ব্যাখ্যা দিয়ে ছোট করা হয় বড় করা যায় না। সবদিক থেকে বলব আমি আলহামদুলিল্লাহ আপনাদের সবার দোয়ায় বিবাহিত জীবনে সুখে আছি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন যেন বাকি জীবনটা সাথে সুখেই কাটাতে পারি।
কর্মক্ষেত্র:
এখনও আমি কিছু করি না। ভবিষ্যতে কিছু করার জন্য এখন থেকে চেষ্টা করছি আপনারা সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন যাতে আমি খুব শীঘ্রই একজন সফল মানুষ হিসেবে নিজের পরিচয় সবার সাথে তুলে ধরতে পারি। ভবিষ্যতে ইচ্ছা ্ আমি একজন সফল উদ্যোক্তা হতে চাই। জীবনে সফল হওয়ার জন্য এখন থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। আপনাদের সাহায্য সহযোগিতা এবং ভালোবাসা থাকলে অবশ্যই সফল হব। ইনশাল্লাহ।
আমি চাই জীবনে সফল হয়ে আমার কাছের মানুষগুলোকে আমার কাছে টেনে নিতে। তখন হয়ত তারা আমাকে কাছে নিতে আবদার করবে না। আমার প্রিয় ভাই ও বোনদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, আপনাদের সাথে আমার জীবনের অনেক বিষয় গুলো শেয়ার করলাম।
যদি কেউ কোন কষ্ট পেয়ে থাকেন বা আমি কোন ভুল করে থাকি প্লিজ সবাই আমাকে ক্ষমা করে দিবেন। এবং আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন আমিও আপনাদের জন্য দোয়া করি আপনাদের দীর্ঘায়ু কামনা করি। ভাল থাকবেন সবাই, আপনাদের সকলের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে আজকের মত আমার গল্প এখানে শেষ করলাম। এতক্ষণ সময় নিয়ে ধৈর্যের সাথে কষ্ট করে আমার জীবনের গল্পটা পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।