সরকারি খাস জমি লিজ নেওয়ার নিয়মাবলী (বাংলাদেশ প্রসঙ্গে)

দলিল

বাংলাদেশে অনেক সরকারি খাস জমি রয়েছে, যা প্রয়োজন অনুযায়ী কৃষি, বসত, বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য লিজ দেওয়া হয়। এসব জমি লিজ নিতে হলে কিছু নির্ধারিত নিয়ম ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। নিচে বিস্তারিতভাবে সেই নিয়মাবলি তুলে ধরা হলো:

১. প্রাথমিক যাচাই

প্রথমে দেখতে হবে জমিটি আসলেই “খাস” কি না। খাস জমি মানে হলো এমন জমি যা সরকারের মালিকানাধীন এবং কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে রেকর্ডভুক্ত নয়।

২. আবেদনপত্র দাখিল

লিজ নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) বা জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয়ে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হয়। আবেদনে নিম্নোক্ত তথ্য থাকতে হয়:

  • আবেদনকারীর নাম ও ঠিকানা
  • জমির পরিমাণ ও অবস্থান
  • লিজ নেওয়ার উদ্দেশ্য (যেমন কৃষি, বসত, ব্যবসা ইত্যাদি)
  • নাগরিক সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি ইত্যাদি

৩. তদন্ত ও যাচাই

আবেদনের পর ভূমি অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সরেজমিনে তদন্ত করেন এবং যাচাই করেন যে:

  • জমিটি আসলেই খাস কি না
  • আবেদনকারীর প্রয়োজনীয়তা বাস্তবসম্মত কি না
  • অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ওই জমির উপর দাবি জানাচ্ছে কি না

৪. কমিটির সিদ্ধান্ত

তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে গঠিত “খাস জমি ব্যবস্থাপনা কমিটি” আবেদন অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেয়। ক্ষেত্রবিশেষে এটি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনেরও প্রয়োজন হতে পারে।

৫. লিজ চুক্তি ও রাজস্ব পরিশোধ

লিজ অনুমোদিত হলে আবেদনকারীকে নির্ধারিত লিজ ফি প্রদান করতে হয় এবং সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করতে হয়। এতে সাধারণত লিজের মেয়াদ, শর্তাবলী ও রাজস্ব প্রদানের নিয়মাবলি উল্লেখ থাকে।

৬. লিজ নবায়ন ও প্রত্যয়ন

লিজ সাধারণত ১-১০ বছর মেয়াদে প্রদান করা হয়। মেয়াদ শেষে নবায়ন করতে হলে পুনরায় আবেদন করতে হয় এবং পূর্বের শর্ত মানা হয়েছে কি না, তা পর্যালোচনা করা হয়।


গুরুত্বপূর্ণ বিষয়:

  • লিজপ্রাপ্ত জমি নির্ধারিত উদ্দেশ্য ব্যতীত অন্য কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
  • সরকারের অনুমতি ছাড়া লিজকৃত জমি বিক্রি বা হস্তান্তর করা আইনত দণ্ডনীয়।
  • লিজ নেওয়ার সময় প্রতারণা বা ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করলে লিজ বাতিল হতে পারে।

এই নিয়মগুলো সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে। সঠিক ও হালনাগাদ তথ্যের জন্য স্থানীয় ভূমি অফিস বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে যোগাযোগ করা উচিত।


দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে সরকারি জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা আমাদের সবার কর্তব্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *