সিরিজ হারের চেয়ে তামিমের আলোচনাই বেশি

খেলাধুলা

তামিম ইকবালের প্রসঙ্গটা যাই যাই করেও যাচ্ছে না। ৬ জুলাই দুপুর থেকে পরদিন বিকেল পর্যন্ত সবার মনে প্রশ্ন ছিল, ঠিক কী কারণে অমন হুট করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে ফেললেন তামিম?

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে তামিম অবসর প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর প্রশ্ন বদলানোর সঙ্গে বেড়েছে প্রশ্নের সংখ্যাও। নতুন প্রশ্ন—প্রধানমন্ত্রী কী বলে তামিমের মত বদলালেন? তামিমই বা প্রধানমন্ত্রীকে কী বলেছেন? ছুটি কাটিয়ে দেড় মাস পর তামিম যে এশিয়া কাপ দিয়ে আবার দলে ফিরবেন, এ রকম একটা ঘটনার পর কতটা স্বস্তিদায়ক হবে সেই ফেরা?

সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন, শেষ প্রশ্নটার উত্তর তো এখন দেওয়া সম্ভবই নয়। তবু চট্টগ্রামে বাংলাদেশ দলের আবহে এখন প্রকাশ্যে বা আড়ালে এসব কৌতূহলই ঘুরে বেড়াচ্ছে। এক ম্যাচ বাকি থাকতেই আফগানিস্তানের কাছে ওয়ানডে সিরিজ হার নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পরও আলোচনায় তামিমের অবসরকাণ্ডই যেন বেশি জায়গা নিয়ে আছে।

আফগানিস্তান সিরিজের প্রথম ওয়ানডের পরদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন তামিম
আফগানিস্তান সিরিজের প্রথম ওয়ানডের পরদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছিলেন তামিমছবি: প্রথম আলো

সেটা হতে পারে দ্বিপক্ষীয় সিরিজের হার–জিৎ বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা এখন আর খুব একটা ধর্তব্যের মধ্যে আনেন না বলেও। আইসিসি টেস্ট চাম্পিয়নশিপ এবং আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ সুপার লিগের বদৌলতে টেস্ট আর ওয়ানডে দুটোই এখন পয়েন্টনির্ভর খেলা হয়ে গেছে। যে খেলার পয়েন্ট টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ বা ওয়ার্ল্ড কাপ সুপার লিগে যুক্ত হবে না, সে খেলা জিতলে আনন্দ হয় ঠিকই, তবে হারলে হতাশাটা আগের মতো আর জেঁকে বসে না। হোক সে হার আফগানিস্তানের বিপক্ষেও।

হারের ক্ষত ঢাকতে খেলোয়াড়েরা নিজেরাই নিজেদের এই বলে প্রবোধ দেন যে এই হারে কোনো ‘লস’ তো হয়নি! কাল দলের এক সদস্যও স্বীকার করে নিলেন, ‘হারলে খারাপ লাগে ঠিকই, তবে যেহেতু এ রকম হার কোনো লক্ষ্য পূরণে বাধা হচ্ছে না, তাই কষ্টটা কম। এখন সামনে কোনো লক্ষ্য থাকলে জিতে বেশি আনন্দ, হারলেও কম কষ্ট।’

নিয়মিত রান পাচ্ছেন না তামিম ইকবাল
নিয়মিত রান পাচ্ছেন না তামিম ইকবালছবি: প্রথম আলো

চিন্তাভাবনার এই পরিবর্তন বিসিবি কর্মকর্তাদের মধ্যেও কিছুটা আছে। দল হারলে তাঁরা কষ্ট পান ঠিকই, নিজেদের মধ্যে আলোচনায় ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের কাটাছেঁড়াও হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত মনকে বুঝিয়ে ফেলেন—‘বিশ্বকাপে তো খেলছি!’ টেস্টের বেলায় হয়তো বলবেন, এই টেস্ট তো টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের অংশ নয়।

কিন্তু যে দল ২০১৬ সাল থেকে দেশের ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে শুধু এক ইংল্যান্ডের কাছে, তাদেরই আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ হেরে যাওয়ার পর কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়াই উচিত। তা ছাড়া বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনই তো শেষ কথা নয়। ওয়ার্ল্ড কাপ সুপার লিগের তৃতীয় দল হিসেবে বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের কাছে ভালো কিছুর প্রত্যাশা থাকবে। তার আগে আছে এশিয়া কাপের মতো আরেকটি বড় টুর্নামেন্ট। এখন থেকেই ভালো খেলার ধারাবাহিকতায় নিজেদের না ভাসালে বড় মঞ্চে বড় কিছু করার আত্মবিশ্বাস পাওয়া কঠিন।

পরশু খেলা শেষে ড্রেসিংরুমে ক্রিকেটারদের সঙ্গে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের সংক্ষিপ্ত আলোচনায় ম্যাচের ভুল–ভ্রান্তি বিশ্লেষণের সঙ্গে এই প্রসঙ্গও এসেছে বলে খবর। যে রকম ব্যাটিং উইকেটে খেলা হয়েছে, তাতে আফগানিস্তানের ৩৩১ রান করা হয়তো অস্বাভাবিক নয়, তবে দুই ওপেনারের সেঞ্চুরির সুবাদে ২৫৬ রানের ওপেনিং জুটি বোলারদের কাছ থেকে একটা ব্যাখ্যা দাবি করেই।

প্রস্তুতিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

ব্যাটিংয়ের কথা যদি বলেন, আফগানিস্তানের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে বাংলাদেশের জন্য সেটা বরাবরই আতঙ্কের অন্য নাম। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে হোম সিরিজে বাংলাদেশ ২–১–এ জিতলেও হেরে যেতে পারত প্রথম ম্যাচটাই। আফগানিস্তানের ২১৫ রানের জবাবে এক ফজল হক ফারুকির তোপে পড়েই মাত্র ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারাতে হয়েছিল। সেখান থেকে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছিল আফিফ হোসেন (৯৩ *) আর মেহেদী হাসান মিরাজের (৮১ *) অবিশ্বাস্য এক জুটির সৌজন্যে।

কিন্তু এমন জুটি তো আর প্রতি ম্যাচে হবে না, ধ্বংসস্তুপ থেকে ওভাবে মাথা তুলেও দাঁড়ানো সম্ভব নয় সব সময়। তাহলে উপায়?

উপায় একটাই—হারানো দিনে ফিরে যাওয়া। যখন জয় মানে ছিল শুধুই জয়, পয়েন্টের হিসাব–নিকাশ নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *