লোডশেডিংয়ে বিপাকে বগুড়া অঞ্চলের ৫৬ হিমাগার মালিক

অর্থনীতি

বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে বগুড়া অঞ্চলের ৫৬ হিমাগারে ৫ লাখ ৫ হাজার ২৬৮ মেট্রিক টন আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হিমাগারের মালিকেরা। লোডশেডিংয়ের কারণে হিমাগারগুলোতে দিনে-রাতে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। বিদ্যুৎ না পেয়ে আলুর মান ধরে রাখতে বাধ্য হয়ে জেনারেটরের মাধ্যমে হিমাগারগুলো সচল রাখতে হচ্ছে।

হিমাগারের মালিকেরা বলছেন, বিদ্যুৎ–সংকটের কারণে ডিজেলচালিত জেনারেটরে হিমাগার চালু রাখতে গিয়ে দিনে তাঁদের এক লাখ টাকার বেশি বাড়তি খরচ হচ্ছে। তাতে ৫৬টি হিমাগারে দিনে বাড়তি খরচ লাগছে প্রায় ৬০ লাখ টাকা। এত বাড়তি খরচ দিয়ে আলু সংরক্ষণ করা তাঁদের জন্য বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বগুড়া ও জয়পুরহাটে গত উৎপাদন মৌসুমে ৯৪ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে ২১ লাখ ৪৮ হাজার ৩৮০ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। এর মধ্যে দুই জেলার ৫৬টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৫ হাজার ২৬৮ মেট্রিক টন।

চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম থাকায় দিনে-রাতে গড়ে ২৫ শতাংশ সময় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।মনোয়ারুল ইসলাম ফিরোজী, মহাব্যবস্থাপক , বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১

গত ৮ মে হিমাগার পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি লাল আলুর বাজারমূল্য ছিল ৩৫ টাকা ও বিদেশি জাতের সাদা আলুর দাম ছিল ২৬ টাকা। প্রতি কেজি আলুর গড় মূল্য ৩০ টাকা ধরে হিসাব করলে এসব হিমাগারে থাকা আলুর বাজারমূল্য প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি।

বগুড়া ও জয়পুরহাট মিলিয়ে ৫৬টি হিমাগারের মধ্যে বগুড়ায় রয়েছে ৩৭টি। আর জয়পুরহাটে ১৯টি। বগুড়ার ৩৭টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলুর পরিমাণ ৩ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টন। এর বাজারমূল্য প্রায় ১ হাজার ২৩ কোটি টাকা। আর জয়পুরহাটের ১৯টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলুর পরিমাণ ১ লাখ ৬৪ হাজার ২৬৮ মেট্রিক টন। যার বাজারমূল্য ৪৯২ কোটি টাকা।

বগুড়া অঞ্চলে বিদ্যুৎ–সংযোগ রয়েছে মূলত দুটি প্রতিষ্ঠানের। একটি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, অন্যটি নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহকদের এলাকাভেদে দিনরাত মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা পোহাতে হচ্ছে। আর নেসকোর গ্রাহকদের লোডশেডিং পোহাতে হচ্ছে গড়ে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা। বগুড়ার বেশির ভাগ হিমাগারই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গ্রাহক। এসব হিমাগারকে দিনের অর্ধেক সময় জেনারেটরের মাধ্যমে হিমাগার সচল রাখতে হচ্ছে।

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার পুনট কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক বিপ্লব কুমার ঘোষ জানান, গত মঙ্গলবার সব মিলিয়ে পৌনে ১০ ঘণ্টা লোডশেডিং ছিল। আর বুধবার লোডশেডিং ছিল ১২ ঘণ্টা ২৫ মিনিটের। বিপ্লব কুমার ঘোষ বলেন, তাঁদের হিমাগারে বর্তমানে ২ লাখ ৮৪ হাজার বস্তা (প্রতি বস্তায় ৬০ কেজি) আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। এসব আলু যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য জেনারেটরের মাধ্যমে হিমাগার সচল রাখা হচ্ছে। তাতে প্রতিদিন গড়ে এক লাখ টাকার বেশি বাড়তি খরচ হচ্ছে জ্বালানি বাবদ। অথচ ৬০ কেজি ওজনের এক বস্তা আলু সংরক্ষণ ভাড়া ৩০০ টাকা। এভাবে জেনারেটর চালু রেখে হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করতে গেলে খরচ দ্বিগুণ বেড়ে যাবে।

লোডশেডিং শেষে বিদ্যুৎ আসার পর হিমাগারের শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র পুরোপুরি সচল করতে কমপক্ষে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। এক ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং হওয়ায় মেশিনই ঠিকমতো চালু করা যাচ্ছে না ।পরিমল প্রসাদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক , আরবি স্পেশালাইজড কোল্ডস্টোরেজ

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার আরবি স্পেশালাইজড কোল্ডস্টোরেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিমল প্রসাদ বলেন, লোডশেডিং শেষে বিদ্যুৎ আসার পর হিমাগারের শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র পুরোপুরি সচল করতে কমপক্ষে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। এক ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং হওয়ায় মেশিনই ঠিকমতো চালু করা যাচ্ছে না। এতে আলু সংরক্ষণ কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে।

লোডশেডিংয়ের অবস্থা জানতে চাইলে বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর মহাব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১০১ মেগাওয়াট। কিন্তু সরবরাহ পাচ্ছি ৬৭ মেগাওয়াট।’ আর বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর মহাব্যবস্থাপক মনোয়ারুল ইসলাম ফিরোজী বলেন, চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ কম থাকায় দিনে-রাতে গড়ে ২৫ শতাংশ সময় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

নেসকোর পরিস্থিতি

বগুড়া শহরকে চার ভাগে ভাগ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে কোম্পানিটি। নেসকোর প্রতিদিন বিদ্যুতের গড় চাহিদা ১১০ মেগাওয়াট। কিন্তু জাতীয় গ্রিড থেকে তারা সরবরাহ পাচ্ছে গড়ে ৫০ মেগাওয়াট। এ কারণে দিনরাত মিলিয়ে ১২ ঘণ্টার বেশি লোডশেডিং করতে হচ্ছে।

নেসকোর বগুড়া অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) হাসিবুর রহমান বলেন, ‘মোট চাহিদার মাত্র ৪৫ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছি আমরা। ফলে লোডশেডিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও কয়েক দিন সময় লাগবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *